একদিন হজরত ওমর ফারুক (রা.) মসজিদে নববিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ এক রোমান ব্যবসায়ী এসে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন, "আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ" (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল)।
হজরত ওমর (রা.) বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "এ কী হলো? হঠাৎ ইসলাম গ্রহণ করলে কেন?"
ব্যবসায়ী উত্তরে বললেন, "আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছি।"
তখন হজরত ওমর (রা.) জানতে চাইলেন, "তোমার ইসলাম গ্রহণের পেছনে কি কোনো বিশেষ কারণ আছে?"
ব্যবসায়ী উত্তরে বললেন, "হ্যাঁ! আমি তাওরাত, বাইবেল, জাবুরসহ আগের নবীদের বহু গ্রন্থ পড়েছি। কিন্তু সম্প্রতি এক মুসলিম বন্দিকে কোরআনের একটি আয়াত তিলাওয়াত করতে শুনি। সেই আয়াত শুনে আমি উপলব্ধি করি যে এত ছোট একটি আয়াতে আগের সব কিতাবের মূল শিক্ষাগুলো একত্রিত হয়েছে। তখনই বুঝতে পারি, এটি অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল করা হয়েছে। এ আয়াতের প্রভাবেই আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি।"
হজরত ওমর (রা.) জানতে চাইলেন, "কোন আয়াতটি শুনে তুমি এ সিদ্ধান্ত নিলে?"
রোমান ব্যবসায়ী সেই আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন,
"যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর শাস্তি থেকে বাঁচতে সচেতন থাকে, তারাই সফলকাম।"
(সুরা নুর, আয়াত: ৫২)
আয়াতটি তিলাওয়াত করার পর রোমান ব্যবসায়ী তার ব্যাখ্যা দিলেন:
১. আল্লাহর আনুগত্য—এটি আল্লাহর ফরজ বিধানাবলির প্রতি একজন ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্যকে নির্দেশ করে।
২. রাসুলের অনুসরণ—এটি নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর সুন্নত ও জীবনপদ্ধতির প্রতি অনুগত থাকার কথা বোঝায়।
৩. আল্লাহকে ভয় করা—এটি ব্যক্তির অতীত জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ, পূর্বের পাপ ও ভুলগুলোর জন্য আল্লাহর শাস্তির ভয়ে তওবা ও অনুশোচনা করা।
৪. তাকওয়ার পথে চলা—এটি ভবিষ্যৎ জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে একজন ব্যক্তি অবাধ্যতা ত্যাগ করে আল্লাহভীতির পথে জীবনযাপন করে।
ব্যবসায়ী বলেন, "যখন কোনো ব্যক্তির মধ্যে এই চারটি গুণ উপস্থিত হয়, তখনই সে চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করে। কারণ, এই চারটি গুণে পুরো দীন (ইসলাম) অন্তর্ভুক্ত। এত বড় একটি জীবনব্যবস্থাকে একটি আয়াতে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আমার হৃদয়কে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।"
ব্যবসায়ীর এই বক্তব্য শুনে হজরত ওমর (রা.) বললেন, "তোমার কথায় নবীজি (সা.)-এর বক্তব্যের সত্যতা রয়েছে। কারণ, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে ব্যাপক অর্থবহ ও গভীর বিষয়কে সংক্ষিপ্তভাবে বলার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’"
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১০৫৪)
0 Comments