পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকে ভালোবাসার চিঠি

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলতেই বেরিয়ে এলো টাকার সঙ্গে এক বস্তা চিঠি। অর্থের ভিড়ে লুকিয়ে থাকা এসব চিঠি যেন মানুষের না বলা কথাগুলোর এক অনন্য ভাণ্ডার।

এক চিঠিতে এক প্রেমিক মিনতি করেছেন—"যাঁকে ভালোবাসি, তাঁর মনে যেন আমার জন্য প্রেম জাগে। তিনি যেন আমাকে বিয়ে করেন।"

আরেক প্রেমিকা লিখেছেন, "আমি সৌদি আরবের এক পুরুষকে ভালোবাসি। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাকে তাঁর জীবনের সঙ্গী করে নেন, যাতে আমরা একসঙ্গে জীবন কাটাতে পারি।"

প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার আকুতি, জীবনের নানা ইচ্ছা আর অগণিত বাসনার কথা জানিয়ে এমন অসংখ্য চিঠি জমা পড়েছে পাগলা মসজিদের সিন্দুকে। ২৯ বস্তা টাকার পাশাপাশি এই এক বস্তা চিঠি যেন মানুষের হৃদয়ের নীরব প্রার্থনার প্রতিচ্ছবি।

পাগলা মসজিদের চিঠিতে এক নারীর হৃদয়স্পর্শী প্রার্থনা

সৌদির এক পুরুষকে ভালোবেসে একজন নারী লিখেছেন পাগলা মসজিদের চিঠিতে:
"হে মহান আল্লাহ, তুমি তাঁকে আমার করে দাও, যেন আমি তাঁকে বিয়ে করতে পারি। সুম্মা আমিন। হে আমার রব, আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না।"

তিনি আরও লিখেছেন, "তুমি আমাকে নবীর দেশের পবিত্র মাটিতে জন্মগ্রহণ করার সৌভাগ্য দিয়েছ। প্রার্থনা করছি, আমি যেন আবার সেই পবিত্র মাটিতেই মৃত্যুবরণ করতে পারি। আমিন।"

নারীর প্রার্থনা এখানেই শেষ হয়নি। তিনি পড়ালেখায় ভালো করার জন্য, পরিবারের শান্তির জন্য, এবং হালাল রুজি-রোজগারের জন্যও আল্লাহর কাছে কায়মনে দোয়া করেছেন। চিঠির শেষ প্রার্থনায় তিনি লিখেছেন:
"হে রব, তোমার কাছে দুই হাত তুলে মিনতি করছি—তুমি আমাকে মক্কার উত্তম, দ্বিনি, ও সুদর্শন একজন পুরুষের সঙ্গে বিবাহের সৌভাগ্য দান করো। আমিন।"

প্রার্থনার প্রতিটি বাক্যে ভর করেছে ভালোবাসা, ইচ্ছা, এবং জীবনের শান্তি খোঁজার গভীর আকুতি।

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে প্রেম, প্রার্থনা ও বিশ্বাসের চিঠি

কিশোরগঞ্জ সদরের এক যুবক নিজের নাম সংক্ষেপে ‘এম’ উল্লেখ করে বাজিতপুরের এক তরুণীর প্রতি ভালোবাসার আকুতি জানিয়ে লিখেছেন:
"আল্লাহ, আমি তোমার এক বান্দিকে আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। আমি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে তোমার এবাদত করতে চাই। যদি সে আমার নসিবে থাকে, তবে তোমার রহমতে আমাদের মিলিয়ে দাও। আর যদি নসিবে না থাকে, তবে তুমি তাঁকে আমার নসিব করো। তুমি তো সবার মন পড়তে পারো, ওর মনে আমার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে দাও। আল্লাহ, তাঁকে আমার সহধর্মিণী করো। তোমার পর যদি আমি কাউকে ভালোবেসে থাকি, তবে তা শুধু তাঁকেই।"

মসজিদ কমিটির আহ্বান

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, প্রতি দানসিন্দুক খোলার সময়ই অসংখ্য চিঠি পাওয়া যায়। তবে এবার অন্যান্যবারের তুলনায় চিঠির সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

২৯ বস্তা টাকার সঙ্গে পাওয়া গেছে প্রায় এক বস্তা চিঠি।
তিনি বলেন, “সিন্দুকগুলো এমনিতেই ঠাসাঠাসি থাকে। ৯টি সিন্দুকের জায়গায় এবার আরও দুটি বাড়িয়ে ১১টি করা হয়েছে। তবুও চিঠির জন্য জায়গা হয় না, অনেকেই টাকা দিতে পারেন না। এসব চিঠি আমাদের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা সবার প্রতি অনুরোধ করছি, দানবাক্সে এ ধরনের চিঠি না ফেলতে।”

টাকা, স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা

টাকা ও চিঠি ছাড়াও দানসিন্দুক থেকে স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা, এমনকি গাছের প্রথম ফল বা শস্যও পাওয়া গেছে। কেউ দিয়েছেন মুরগির প্রথম ডিম, কেউবা মুরগি, ছাগল বা গরু দান করেছেন।

মানুষের বিশ্বাস, পাগলা মসজিদে খাস নিয়তে কিছু চাইলে তা পূরণ হয়।
গতকাল শনিবার দানসিন্দুক খোলার পর এবার পাওয়া গেছে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ অর্থ— ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা।

এ যেন শুধু অর্থ বা উপহারের নয়, বরং মানুষের ভালোবাসা, আশা আর প্রার্থনার পবিত্র কেন্দ্র।