হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। (ফাইল ছবি: রয়টার্স)
সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে ইসলামপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। এই গোষ্ঠীর প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি।
আজ রোববার এইচটিএস এক বিবৃতিতে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের ঘোষণা দেয়। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, "জালিম শাসক বাশার আল-আসাদ দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। সিরিয়া এখন মুক্ত। এর মধ্য দিয়ে একটি অন্ধকার অধ্যায়ের সমাপ্তি এবং নতুন যুগের সূচনা হলো।"
বাশার আল-আসাদের দেশত্যাগ এবং তাঁর দুই দশকের শাসনের পতনের পর, এইচটিএসের নেতা জোলানিকে ঘিরে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তার অতীত ও বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে জোলানির কার্যক্রমের নানা দিক।
আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির প্রকৃত নাম আহমেদ হুসাইন আল-শারা। তিনি ১৯৮২ সালে সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় তাঁর বাবা পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী হিসেবে সেখানে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৯ সালে পরিবারসহ তিনি সিরিয়ায় ফিরে আসেন এবং দামেস্কের উপকণ্ঠে বসতি স্থাপন করেন।
আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির (মাঝে) প্রকৃত নাম আহমেদ হুসাইন আল-শারা। (ফাইল ছবি: রয়টার্স)
আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির প্রকৃত নাম আহমেদ হুসাইন আল-শারা। তিনি ১৯৮২ সালে সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তাঁর বাবা পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৮৯ সালে তাঁর পরিবার সিরিয়ায় ফিরে আসে এবং দামেস্কের উপকণ্ঠে বসতি স্থাপন করে।
দামেস্কে অবস্থানকালে জোলানির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ২০০৩ সালে তিনি সিরিয়া থেকে ইরাকে যান এবং আল-কায়েদায় যোগ দেন। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে সামরিক অভিযান শুরু করলে জোলানি যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এই সময় থেকেই তাঁর নাম আলোচনায় আসে।
২০০৬ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং পরবর্তী পাঁচ বছর কারাগারে বন্দী ছিলেন।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গণতন্ত্রের দাবিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়। কিন্তু বাশার আল-আসাদ সরকার বিক্ষোভ দমনে সহিংসতার পথ বেছে নেয়, যা পরবর্তীতে দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়।
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে ইসলামপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। (ছবি: রয়টার্স)
২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি মুক্তি পান। এরপর তার নেতৃত্বে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত। এই সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্রুতই বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে, বিশেষ করে ইদলিবে, শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
প্রথমদিকে জোলানি ইরাকের ইসলামিক স্টেট (আইএস) প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতেন। পরে এই গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট (আইএসআইএল বা আইএসআইএস) নামে পরিচিতি লাভ করে।
২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে বাগদাদি আকস্মিকভাবে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন এবং সিরিয়ায় নিজেদের কার্যক্রম বিস্তৃত করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে আইএসআইএল আল-নুসরা ফ্রন্টকে নিজেদের সঙ্গে একীভূত করার চেষ্টা করে। এই সময় থেকেই আইএসআইএলের উত্থান শুরু হয়।
জোলানি এই পরিবর্তনকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো আল-জাজিরাকে টেলিভিশন সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, তাঁর গোষ্ঠীর দেওয়া "ইসলামিক আইনের ব্যাখ্যা" অনুযায়ীই সিরিয়া শাসিত হবে।
0 Comments